সরকারী চাকরির প্রস্তুতি যে ভাবে শুরু করবেন। সরকারি চাকরির পরীক্ষা ভালো করার উপায়– সকল সরকারি চাকরি প্রত্যাশি যুবক ভাইয়েরা নেট দুনিয়া খুজে বেড়ান। একাডেমিক এবং চাকরির পরীক্ষার মধ্যে অনেক ফারাক। চাকরির পরীক্ষায় অনেক জানা বিষয় অজানা হয়ে যায়। তাছাড়া একাডেমিক পরীক্ষায় মার্ক কিছু কম পেলেও তেমন কোনো সমস্যা হয়না। কিন্তু চাকরির পরীক্ষায় প্রাপ্ত নাম্বার চাকরি পাওয়ার জন্য অনেক বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। তাই সরকারি চাকরির পাশাপাশি অন্যান্য চাকরির পরীক্ষায় ভালো করার উপায় গুলো ভালো করে রপ্ত করতে হবে।
বর্তমানে সরকারি চাকরি সবচেয়ে বড় প্রত্যাশার বিষয় চাকরি প্রার্থীদের কাছে। আর্থিক সুযোগ সুবিধা, সামাজিক মর্যাদা, চাকরির স্থায়িত্ব ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় সরকারি চাকরি সোনার হরিণের মত দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে।তাই সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি একটু বেশি যত্ন সহকারে নিতে হয়। কারন একটি সরকারি চাকরি আপনার জীবন পালটে দিতে পারে।
কিভাবে পড়লে সরকারি চাকরি পাওয়া সহজ হবে কিংবা কীভাবে পড়লে চাকরির পরীক্ষায় মিলবে সাফল্য তা আলোচনা করার চেষ্টা করবো। পাশাপাশি সরকারী চাকরির প্রস্তুতি যেভাবে শুরু করবেন এবং চাকরির পরীক্ষায় ভালো করার উপায় গুলো এখানে তুলে ধরবো। তবে এখানে উল্লেখিত টিপস গুলো মেনে চলতে হবে বা মানলেই সরকারি চাকরি পাওয়া যাবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নাই।
বেশিরভাগ চাকরির পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান এই চারটি ক্যাটাগরিতে প্রশ্ন করা হয়। তবে বর্তমান সময়ে আলাদা করে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে কিছু প্রশ্ন করা হয়। তাই এই চারটি বিষয় ভালোভাবে আয়ত্ব করতে পারলে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় ভালো করা যায়।
বিষয় তালিকা বা টেবিল অফ কনটেন্ট
কিভাবে পড়লে সরকারি চাকরি পাওয়া সহজ হবে ?
সরকারি চাকরি এখন খুবই প্রতিযোগিতাপুর্ণ চাকরি। একটি মাত্র পদের বিপরীতে কয়েকগুন চাকুরি প্রত্যাশি প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে থাকেন। তাই চাকরির পরীক্ষার যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হয়। যেন তেন ভাবে প্রিপারেশান নিলে এখন আর সরকারি চাকরিতে কাংখিত সাফল্য পাওয়া যায়না। তাই সময়ের সাথে সাথে চাকরির পরীক্ষায় ভালো করার উপায় গুলোও আধুনিক এবং পরবর্তিত হয়েছে।
তবে সরকারী চাকরির প্রস্তুতি যেভাবে শুরু করবেন তার মধ্যে অন্যতম হলো উল্লেখিত চারটি বিষয়ের প্রশ্ন পদ্ধতি এবং মান বন্টন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা এবং জ্ঞান থাকতে হবে। প্রশ্নকাঠামো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার পাশাপাশি উল্লেখিত বিষয়গুলোর বিস্তারিত সিলেবাস জানতে হবে। সিলেবাস না জেনে এলোপাতারিভাবে পড়াশোনা করা আর অন্ধকারে কালো বেড়াল খুজে বেড়ানো একই কথা।
কীভাবে পড়লে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় মিলবে সাফল্য?
কীভাবে পড়লে চাকরির পরীক্ষায় মিলবে সাফল্য- খুব বেশি বেশি সার্চ হয় এখন নেট দুনিয়ায়। একই ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে কেউ চাকরির পরীক্ষায় ভালো করছে আবার কেউ চাকরির পরীক্ষায় সাফল্যের ধারের কাছেও যেতে পারছেনা। তাই চাকরির পরীক্ষায় ভালো করার উপায় গুলো অনেকটা আপেক্ষিক ব্যাপার। তবে কিছু গাইডলাইন এবং পরামর্শ যথাযথ ফলো করলে এবং সেই মত নিজেকে গড়ে তুললে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় ভালো করার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। সাধারনত বেশিরভাগ চাকরি প্রত্যাশি সরকারি চাকরি বলতে বিসিএস এর দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকেন। বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি-একটি পরিপূর্ণ গাইড লাইন ভালো করে অনুসরণ করতে পারেন
সরকারি চাকরির প্রস্তুতির জন্য দারুণ এবং কার্যকরী কিছু টিপস
সরকারি চাকরির প্রস্তুতি জন্য দারুণ এবং কার্যকরী কিছু টিপস এর কোনো শেষ নাই। একেকজন একেক ধরনের টিপস ফলো করে থাকেন। যিনি যে ভাবে সাফল্য পেয়েছেন তিনি সেই বিষয় গুলোকেই চাকরির পরীক্ষায় সাফল্যলাভের টিপস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য আপনাদের জন্য তুলে ধরা হলো।
সরকারি চাকরির পরীক্ষা ভালো করার উপায় বাংলা সাহিত্য ও ব্যাকরণএর প্রস্ততি
সরকারি চাকরি পরীক্ষা ভালো করতে হলে পড়াশোনার ক্ষেত্রেও আপনাকে অবশ্যই বুদ্ধিদীপ্ত এবং কৌশলী হতে হবে। বাংলা সাহিত্য ও ব্যাকরণ এর কোন কোন বিষয়গুলো পড়বেন তা এখানে তুলে ধরা হলো।
- উল্লেখযোগ্য কবি- সাহিত্যিকদের জীবন ও সাহিত্যকর্ম,
- বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে।
- গল্প, কবিতা বা উপন্যাসের রচয়িতা থেকে প্রশ্ন বেশি আসে।
- ব্যাকরণ অংশে শব্দ, পদ, কারক- বিভক্তি, প্রকৃতি- প্রত্যয়, সন্ধি, সমাস, শুদ্ধ বানান পড়তে হবে।
- পারিভাষিক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ থেকেও প্রশ্ন আসতে পারে।
- সন্ধি, সমাস, কারক থেকে প্রতিবছরই প্রশ্ন থাকে
উল্লেখিত বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন আসলে যেন একপলক দেখামাত্রই যেন উত্তর করা যায় সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে।কিছু মুখস্ত করতে কিছু বিষয় ভুজে পড়তে হবে আর কিছু বিষয় নিজের বুদ্ধিমত্তা থেকে লিখতে হবে। তাই বাংলা ব্যাকরণ এ জন্য বোর্ড প্রণীত নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বইয়ের সব অধ্যায়ের পাঠ এবং উদাহরণ ভালোভাবে আয়ত্ব করতে হবে।
সরকারি চাকরির পরীক্ষা ভালো করার উপায় ইংরেজি প্রস্তুতি
বাংলাদেশের বেশিরভাগ Students ইংরেজীতে দূর্বল এবং তারা ইংরেজীকে ভয় পায়। কোনো মতে পাশ করতে পারলেই হলো। তাই চাকরির পরীক্ষায় তারা ইয়ংরেজীতে ভালো করতে পারেনা। তবে অভিজ্ঞ ইংরেজী শিক্ষকের কাছ থেকে গাইড লাইন নিয়ে সেই অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করতে পারলে ইংরেজিতেও ভালো করতে পারবেন। বিশেষ করে নিচের দেয়া বিষয় গুলো ভালো ভাবে আয়ত্ব করতে হবে।
- বেসিক গ্রামার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে
- Preposition, Antonym, Synonym ভালো করে প্রতে হবে , এখান থেকে প্রশ্ন থাকবেই
- Parts of Speech, Tense, Spelling, Right forms of verb বুঝে বুঝে পড়তে হবে এখান থেকেও প্রশ্ন থকবেই
- Transformation, Voice, Narration সঠিকভাবে আয়ত্ব করতে হবে কারন পরীক্ষায় এখান থেকে প্রশ্ন থাকবে।
- Spelling, Right forms of verb, Antonym, Synonym থেকে প্রশ্ন বেশি আসে তাই এগুলোতে বেশি জোড় দিতে হবে।
- অভিজ্ঞ টিচারের পরামর্শ সব থেকে বেশি কার্যকরী । তাছাড়া অনুশীলনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ গাইড, প্রফেসরস জব সল্যুশন এবং ভালো মানের গ্রামার বই পড়তে । জর্জ সিরিজের বইও পড়তে পারেন।
উল্লেখিত বিষয় গুলো যথাযথ ভাবে অনশীলন করলে ইংরেজীতে ভালো করার সম্ভাবনা একশত ভাগ। তবে অবশ্যই আপনার ইওংরেজী ভীতি দুর হবে ।
সরকারি চাকরির পরীক্ষা ভালো করার উপায় গনিত প্রস্তুতি
আমাদের দেশের বিশিরভাগ মেয়ে শিক্ষার্থীরা গনিতে কাচা তবে সংসার জীবনের হিসেবের ক্ষেত্রে তারা খুবই বেশি দক্ষ হিসেবি।চাকরির পরীক্ষায় গনিতের যে সব প্রশ্ন হয় তা একটু হার্ড বা কঠিনই হয়ে থাকে। পরীক্ষার এই স্বল্প সময়ে তাই শর্টকাট পদ্ধতিতে অংকের সমাধান করার কৌশল রপ্ত করতে হবে। এতে করে স্বল্প সময়ে সঠিকভাবে অঙ্ক করা যাবে। গনিতের প্রস্তুতি এমনভাবে নিতে হবে যেন মুখে মুখেই অংকের সমাধান করা যায়। ক্যাল্কুলেটর ছাড়া অঙ্ক করার অভ্যাস করতে হবে।
- পুরনো পাঠ্যক্রমের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম ও নবম- দশম শ্রেণির গণিত বই অনুসরণ করতে হবে।
- অঙ্ক বারবার চর্চা করতে হবে করতে হবে যেন তা মুখস্ত হয়ে যায়।
- সুদ-কষা, ঐকিক নিয়ম, লাভ-ক্ষতি, ভগ্নাংশ অবশ্যই থাকবে।
- বীজগণিতের সাথে জ্যামিতি প্রতে হবে।
- অনেক সময় দশমিকের গুণ, ভাগ থাকে এবং জ্যামিতির সাধারণ সূত্র ও সংজ্ঞা থেকে প্রশ্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় এসে থাকে।
MP3 ম্যাথ বই কিংবা ম্যাজিক ম্যাথ ফলো করতে পারেন তবে অঙ্কের জন্য অনুশীলনীর কোনো বিকল্প নাই।
সরকারি চাকরির পরীক্ষা ভালো করার উপায় সাধারণ জ্ঞান প্রস্তুতি
চলতি ঘটনা, বাজেট,বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয় সবগুলো বিষয় ভালোভাবে জানতে হবে। বিশেষ করে নিচের উল্লেখিত বিষয়গুলো ভালোভাবে জানতে হবে এবং পড়তে হবে।
- সাম্প্রতিক বিষয় জানতে হবে
- বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস , অভ্যুদয়ের ইতিহাস, জাতীয় বিষয়াবলি থেকে প্রশ্ন আসে।
- আন্তর্জাতিক অংশে দক্ষিণ এশিয়া এবং এশিয়া সম্পর্কিত প্রশ্ন বেশি দেখা যায়।
- খেলাধুলা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, পুরস্কার, দিবস ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন আসে।
- সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট প্রশ্ন যেমন বিভিন্ন আবিষ্কার, রোগব্যাধি, বিভিন্ন খাদ্যগুণ, কম্পিউটার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।
- সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতির জন্য আজকের বিশ্ব, এমপিথ্রি, নতুন বিশ্ব পড়্তে পারেন এর সাথে জ্ঞান সিন্ধু দেখতে পারেন
- সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে প্রশ্ন বেশি থাকে।
- বিশেষত এক বছরের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশ্বে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
অধিকাংশ বেকার যুবক পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য হন্য হয়ে পড়েন যা একটা মহা ভুল। তাদের ধারণা আগে পড়াশোনা শেষ করি তারপর চাকরি। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার শুরু থেকেই চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা দরকার। বিশেষ করে বিসিএস যদি লক্ষ্য হয় তবে বিসিএস এর সিলেবাস ধরে পড়াশোনা শুরু করা। অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া এবং প্রতিদিন নিয়মিত বিসিএসের সিলেবাস মত পড়াশোনা করা।
কঠিন প্রশিক্ষণ সহজ যুদ্ধ-এটা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মূলমন্ত্র। সরকারী বে-সরকারী সকল চাকুরীতেই এখন প্রচুর কম্পিটিশন হয়। যোগ্য চাকরি প্রার্থি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এমসিকিউ, লিখিত এবং ভাইভা পরীক্ষা নেয়া হয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে শুধু একটি পরীক্ষা হয়ে থাকে। যোগ্য প্রররথীকে যেভাবেই মূল্যায়ন করা হোক না কেন, এর জন্য আপনার ভালো প্রস্তুতি থাকা জরুরী। সরকারি চাকরি পরীক্ষা ভালো করার উপায় গুলো থেকে আপনার পছন্দমত টিপস গুলো মেনে চলুন।
সরকারি চাকরির জন্য সফল হতে হলে শর্টকাট কোনো রাস্তা নাই। সাফল্য পেতে হলে দরকার দীর্ঘমেয়াদী প্লান। অপরিসীম ধৈর্য আর দৈনিক কমপক্ষে ১২ ঘন্টা পড়াশোনা করার অভ্যাস করতে হবে তাহলেই বিসিএসসহ যেকোন চাকুরী আপনার হাতে ধরা দেবে সর্বোপরি ভাগ্যেও থাকতে হবে। সেরা চাকরির জন্য দরকার সেরা প্রস্তুতি। কথায় আছে, ওয়ার্ক হার্ড এর থেকে বেশি কার্যকর হলো ওয়ার্ক স্মার্ট, আর সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য সঠিক পদ্ধতিতে কঠোর পরিশ্রম করা জরুরি। শর্টকাট পড়ে বেশিদূর যাওয়া সম্ভব না-মনমগজে এটা গেথে নিতে হবে। তাই লক্ষ্য স্থির রেখে উপযুক্ত স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী কাজ করলেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত সোনার হরিণ সরকারি চাকরি। সাথে ইতিবাচক মনোভাব থাকাটা খুব জরুরি, যেন মানসিক দিকটা শক্তিশালী থাকে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে Industry is the key to success.