বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ চাকুরির ক্ষেত্রে প্রার্থীকে জীবনবৄত্তান্ত বা সিভি জমা দিতে হয়।সিভি যাচাই বাছাই করার পরই সাধারনত মানব সম্পদ বিভাগ থেকে একজন চাকুরি প্রার্থীকে সাক্ষাৎকার বা ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকা হয়। তাই চাকুরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সিভির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।অধিকাংশ চাকুরি প্রার্থী যেনতেন একটা সিভি জমা দিয়ে দায়সারেন। যার কারনে চাকুরি নামক সোনার হরিণ ধরাছোয়ার বাইরেই থেকে যায়। তাই আসুন জেনে নেই সুন্দর ও আকর্ষনীয় প্রোফেশনাল সিভি তৈরি কিভাবে করবেন সেসংক্রান্ত খুটিনাটি কিছু বিষয়।
বিষয় তালিকা বা টেবিল অফ কনটেন্ট
সুন্দর ও আকর্ষনীয় প্রোফেশনাল সিভি তৈরি কিভাবে করবেন চলুন বিস্তারিত জেনে নেই
সিভির শুরুতেই আপনার নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা লিখুন
একটি আকর্ষনীয় প্রোফেশনাল সিভির শুরুতেই প্রার্থীর নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা থাকা উচিত। নিজের নামকে শিরোনাম হিসেবে ব্যবহার করে সিভি তৈরি করাই যুক্তি সংগত। ইমেইল এড্রেস, মোবাইল নাম্বার স্পষ্ট করে লেখা থাকা আবশ্যক। পাশাপাশি প্রোফেশনালদের প্লাটফর্ম লিংকডিন এর প্রোফাইল লিংক্ ও ব্যাবহার করতে পারেন।
সম্প্রতি তোলা পিপি সাইজের রংগিন ছবি
সম্প্রতি তোলা পিপি সাইজের রংগিন ঝকঝকে পরিস্কার ছবি স্ক্যান করে সংযুক্ত করতে পারেন। সেলফি বা ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি পরিহার করা উত্তম। স্টুডিও থেকে তোলা ল্যাবপ্রিন্ট ছবি ব্যবহার করা ভালো হয়।
ক্যারিয়ার অবজেক্টিভস
আপনার কর্মজীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সংক্ষেপে সুন্দর এবং প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরতে পারেন এই খানে । প্রতিষ্ঠানের কাজের ক্ষেত্রে আপনি কতটা অবদান রাখতে পারেন তা উল্লেখ করতে পারেন।
পেশাগত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা
আপনার পেশাগত জীবনের সকল কাজের অভিজ্ঞতা পর্যায়ক্রমে তুলে ধরুন এই অংশে। আপনার সর্বশেষ কাজের ধরন ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রথমে লিখুন। এরপর বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করুন।প্রতিষ্ঠানের নাম,পদবী,কাজের বিস্তারিত বিবরণ এবং সময়কাল উল্লেখ করুন।ইন্টার্ণশিপ বা অন্যকাজের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরতে পারেন।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
সর্বশেষ অর্জন করা ডিগ্রি প্রথমে লিখে বাকি গুলো ক্রমানুসারে উল্লেখ করা উত্তম। ডিগ্রি,বিভাগ,প্রতিষ্ঠানের নাম,পাশের সাল ও জিপিএ উল্লেখ করা আবশ্যক।কোনো পরিক্ষার ফলাফল না পেয়ে থাকলে সে ক্ষেত্রে এপিয়ার্ড লেখা ভালো।
প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা
শিক্ষা জীবনে বা কর্ম জীবনে কোনো প্রশিক্ষন বা কর্ম শালায় অংশ গ্রহন করে থাকলে তা উল্লেখ করুন। তবে অবশ্যই প্রশিক্ষন বা কর্ম শালার বিষয়, স্থান ,তারিখ ও প্রশিক্ষকের নাম উল্লেখ করতে পারেন।
আপনার শখ এর কথা উল্লেখ করুন
প্রত্যেকটা মানুষের ব্যাক্তিগত কিছু শখ বা ভালো লাগার বিষয় থাকে। আপানর কিছু উল্লেখযোগ্য শখের কথা তুলে ধরতে পারেন। যেমন বিভিন্ন ধরনের ভ্লান্টিয়ার কাজ, বাগান করা বা বই পড়া ইত্যাদি।
ভাষাগত দক্ষতা
ভালোমানের চাকরির জন্য ইংরেজী ও বাংলা ভাষায় দক্ষতা থাকা অত্যাবশ্যকীয়। বিশেষ করে ইংরেজি ভাষা বলা ও লেখার দক্ষতা জরুরী। তাই ভাষাগত দক্ষতার ক্ষেত্রে IELTS, TOEFL ইত্যাদির কথা উল্লেখ করতে পারেন। বাংলার ক্ষেত্রে স্টান্ডার্ড বা প্রমিত বাংলাভাষার কোনো শর্ট কোর্স এর কথা সংযোজন করতে পারেন।
কম্পিউটার ট্রেইনিং ও দক্ষতা
বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রায় সব চাকরির ক্ষেত্রে কম্পিউটার জানা আবশ্যক। বিশেষ করে এমেস ওয়ার্ড, এমএস এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট জানা থাকতে হবে। এছাড়া ফটোশপ বা ভিডিও এডিটিং বা অনলাইন অন্যকোনো সফটওয়ার এর কাজ জানা থাকলে উল্লেখ করতে পারেন।
রেফারেন্স বা পরিচয়দানকারী
নিকটাত্মীয় বা পরিচিত কারো নাম সিভি তে রেফারেন্স হিসবে উল্লেখ করতে পারেন। এতে করে আপনার প্রতি চাকরি দাতার বিশ্বাস যোগ্যতা অনেক বেড়ে যাবে। তবে অবশ্যই রেফারেন্স হিসাবে উল্লেখকারী ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে।আনুমতি প্রাপ্তি সাপেক্ষে তার নাম, ইমেইল এড্রেস, মোবাইল নাম্বার,পদবি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করতে পারেন।
অঙ্গীকারনামা
ভূল তথ্য কোনোভাবেই সিভিতে উল্লেখ করা যাবেনা। সিভিতে সংযোযিত সকল তথ্য নির্ভূল ও সঠিক এই মর্মে অংগীকার নামা প্রদান করতে হবে। সিভির একদম নিচের দিকে আপনার ও স্বাক্ষর থাকা বাঞ্ছনীয়।
আরও বিশেষ কিছু টিপস
একই ধরনের মার্জিত ফন্ট ব্যবহার করা
আপনার সিভিটা যেন দেখতে সুন্দর হয় সে জন্য ফন্ট ব্যবহারে বেশ সতর্ক হতে হবে।আজে বাজে কোনো ফন্ট ব্যাবহার না করাই ভালো। ফন্টের সাইজ যেন একেবারে ছোট না হয় বা বেশি বড় ও যেন না হয়। হেডারের জন্য ফন্ট সাইজ-১৪ এবং অন্যান্য লেখার জন্য ১১/১২ হলেই ভালো। আকর্ষনীয় করার জন্য কিছু লেখার স্টাইলে বোল্ড এবং ইটালিক করতে পারেন। কালো রংয়ের ফন্ট ব্যবহার করাই সুবিধাজনক।
প্রয়জনীয় ও প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরুন
সিভিতে উল্লেখিত আভিজ্ঞতা যেন প্রাসঙ্গিক হয়। অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো তথ্য যেন সিভিতে না থাকে। যে জবের জন্য সিভি তইরি করছেন তার সাথে সংগতি রেখে অভিজ্ঞতা গুলো সাজিয়ে লিখুন। জব চাহিদা এর সাথে মিল রেখে আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলিকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করুন। অপ্রয়োজনীয় গুরুত্বহীন অভিজ্ঞতা ছেটে ফেলুন।
অপ্রয়োজনীয় বিশেষণ উল্লেখ থেকে বিরত থাকুন
অযথা কোনো বিশেষণ দিয়ে সিভির কলেবর বড় না করে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। তবে উতসর্গ, জবাবদিহিতা, লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারনী , অর্জন ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতি জোড় দিন। কর্মজীবনে আপনার বশেষ কোনো অর্জন থাকলে তা তুলে ধরতে পারেন।
সংক্ষিপ্ত ও অর্থবহ সিভি তৈইরি করুন
সংক্ষিপ্ত আকারে মূল তথ্যগুলো তুলে ধরে সিভিকে অর্থবহ করে তুলুন। দরকারি তথ্য অন্তর্ভক্ত করতে গিয়ে সিভির আকার বড় হলেও কোনো সমস্যা নাই। ছোট করতে গিয়ে আসল কথা বাদ দেয়া যাবেনা। স্বাভাবিকভাবে সিভির কলেবর দুই পৄষ্ঠা থাকাটাই শ্রেয়।
সর্বোপরি নির্ভুল সিভি তৈরি করুন
ভূলেভরা সিভি আপনার ক্যারিয়ার কে ধ্বংস করে দিবে। তাই সিভি যেন একশতভাগ নির্ভূল হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। দাড়ি, কমা, সেমিকোলোন ইত্যাদির যথাযথ ব্যবহার করুন। কম্পিউটার কম্পোজ করার পর সিভিটা চেক করুন ।কোনো বানান ভূল থাকলে তা সংশোধন করুন। প্রয়োজনে একজন বিশেষজ্ঞ দ্বারা আপনার সিভিটা চেক করে নিন । পরিশেষে একটী সুন্দর,নিখুত এবং নির্ভূল সিভি তৈরি করুন
নিজেকে চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুত করবেন তা এখানে জেনে নিন